‘পুরুষের লিঙ্গ’ রক্ষায় ঢাকার রাজপথে কতিপয় পুরুষ বিশ্ব ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত

 ‘পুরুষের লিঙ্গ’ রক্ষায় ঢাকার রাজপথে কতিপয় পুরুষ বিশ্ব ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত

আর.এইচ অসীম

বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে নারী দ্বারা পুরুষের লিঙ্গ কর্তনের ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রতিটা ঘটনার পেছনে কারণ দেখা গেছে পুরুষের বহুগামিতা। ঘরে বাইরে সমানভাবে বহুগমনের কারণে সক্ষুব্ধ নারীরা তাদের স্বামী বা পছন্দের পুরুষের লিঙ্গটি কর্তন করে দিয়েছেন। এছাড়াও জোর করে বা রাতে পরনারীদের ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করতে যেয়ে গত দু বছরে নুন্যতম ছয়জন পুরুষ তাদের লিঙ্গ খুইয়েছেন। আর গত একে দশকে বিশের অধিক। পুরুষের লিঙ্গ বলে কথা। লিঙ্গ নেই তো পুরুষত্বও নেই।

বাংলাদেশের আইনে যে কোন কারণেই পুরুষ লিঙ্গ হারাক না কেন এর শাস্তি খুবই কম। আর তাই এবার পুরুষের লিঙ্গ বাঁচাতে ঢাকার রাজপথে মানব বন্ধন করেছে কতিপয় পুরুষ। মঙ্গলবার ৮ ডিসেম্বর ‘এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের ব্যনারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে তারা।
তারা যে ব্যানার প্রদর্শন করেছে তাতে লেখা ছিল ‘ পুরুষের লিঙ্গ কর্তন বা পুরুষত্বহীন করার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাই।’ বিশ্বের ইতিহাসে এ মানববন্ধটি এক বিরল দৃষ্টান্ত। এর আগে পৃথিবীর কোথাও পুরুষের লিঙ্গ বাঁচানোর আন্দোলন হয় নি।

পুরুষের প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক খান। তিনি বলেন, পুরুষের প্রতি যৌন সহিংসতা হিসেবে লিঙ্গ-কর্তনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। কখনও স্ত্রীর দ্বারা বা কখনো দুর্বৃত্তদের দ্বারা পুরুষাঙ্গ কর্তনের মত নৃশংস অপরাধের শিকার হচ্ছে পুরুষরা। এই অপরাধের ফলে যৌন জীবন ও পিতৃত্বের ক্ষমতা আজীবনের মত হারিয়ে ফেলছে অনেক পুরুষ। অনেক সময় এই গুরুতর জখমে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। অথচ অপরাধের মাত্রা ও ভিকটিম পুরুষের ক্ষতির তুলনায় লিঙ্গ-কর্তনের অপরাধীদের অনেক লঘু শাস্তি হচ্ছে। আমরা লিঙ্গ-কর্তনের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধানের দাবি জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক খানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আইন উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাওসার হোসেইন, এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম, আলমগীর আহমেদ ও তাহমিনুর রহমান সজীবসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা।

২০১৫ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় গোড়াই ইউনিয়নের সোহাগপাড়া এলাকায় কুপ্রস্তাব দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এক তরুণী মাসুদ রানা (২৫) নামে এক যুবকের লিঙ্গ কেটে দেয় গুরুতর অবস্থায় তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সে যাত্রায় প্রাণ রক্ষা পেলেও মাসুদ রানা তার পুলিঙ্গটি হারান চিরতরে।

স্থানীয়রা জানান, মাসুদ দীর্ঘদিন ধরে সোহাগপাড়া এলাকায় বসবাসরত গাইবান্ধা জেলার এক তরুণীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে মঙ্গলবার রাতে ওই তরুণী কৌশলে মাসুদ রানাকে ধেরুয়া এলাকার নিরিবিলি হোটেলে আসতে বলেন। কথামত মাসুদ সেখানে আসেন। পরে মাসুদ ওই তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করলে তরুণী ব্লেড দিয়ে তার লিঙ্গ কেটে দেয়। পরে গুরুতর অবস্থায় মাসুদকে উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বছর ১০ মে নওগাঁর ধামইরহাটে অজ্ঞান করে স্বামীর লিঙ্গ কর্তনের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে  স্ত্রী পলাতক রয়েছে। আহত স্বামী মুমূর্ষু অবস্থায় ধামইরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের দেউলবাড়ী গ্রামে।

এ বছর ২৪ জুন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় চন্ডিগড় ই্উনিয়নের ধানশিরা গ্রামে পরকীয়া সন্দেহের জেরে স্বামীর লিঙ্গ কেটে রক্তাক্ত ঝড়ালো স্ত্রী। ওইদনি দুপুরের পর এমন ঘটে। ওই গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে ভিকটিম আব্দুল লতিফ (২৭) তার স্ত্রী রেখা আক্তার কর্তৃক এ ঘটনার শিকার হন। ভিকটিমকে প্রথমে দুর্গাপুর হাসাপাতাল নেয়া হলে পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভিকটিমের চাচাতো ভাই হাদি জানান,লতিফের সাথে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠায় এ নিয়ে স্ত্রী স্বামীকে সন্দেহ পোষন করে এবং প্রায় সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সময় ঝগড়া লেগে থাকতো। সেদিন (মঙ্গলবার)দুপুরের একটু পরে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্ত্রী রেখা ব্লেড দিয়ে লতিফের লিঙ্গ কেটে ফেললে তার চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় সে লুঙ্গি চেপে ধরে আছে। উদ্ধার করে প্রথমে দুর্গাপুর হাসপাতাল পরে ময়মনসিংহ হাসপাতাল নেয়া হয়েছে।

২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর বরগুনার তালতলীতে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে স্বামীর লিঙ্গ কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ওইদিন রাত ৩টার  উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া আগাপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। স্বামীর নাম মাহাতাব (৩২) ও স্ত্রীর নাম আয়েশা।
 মাহাতাবের পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্বামীর পরকীয়ার খবর শোনার পরেই মনোমালিন্য শুরু হয়। এরপর বুধবার রাতে স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে ধারালো চাকু দিয়ে তার লিঙ্গ কর্তন করে আয়েশা। লিঙ্গ কেটে দিয়ে সে রাতেই পালিয়ে যায় স্ত্রী আয়েশা।

No comments

Theme images by IntergalacticDesignStudio. Powered by Blogger.